২০,০০০ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে রাজ্যের ইস্পাত শিল্প - Get Breaking & Latest Bengali News Online

Breaking

সোমবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২০

২০,০০০ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে রাজ্যের ইস্পাত শিল্প

কৌশিক প্রধান লকডাউনের এক মাসেই ক্ষতি ছাড়িয়েছে ১০,০০০ কোটি টাকা। লকডাউন উঠে গেলে বাজারে দ্রুত ইস্পাতের চাহিদা ফিরবে এমন সম্ভাবনাও নেই। এই পরিস্থিতিতে সরকার আর্থিক সহায়তা না দিলে রাজ্যের বড়, মাঝারি, ছোট ইস্পাত তৈরির সংস্থাগুলিতে সব মিলিয়ে প্রত্যক্ষ প্রায় এক লক্ষ কর্মীর এপ্রিল মাসের বেতন পাওয়া ঘোর অনিশ্চিত। পাশাপাশি, আরও যে প্রায় চার লক্ষ মানুষ পরোক্ষ ভাবে এই শিল্প ক্ষেত্রের উপর নির্ভরশীল, তাঁদের ভবিষ্যতও এক রকম সুতোর উপর ঝুলছে। লকডাউন দীর্ঘস্থায়ী হলে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান ও পশ্চিম মেদিনীপুরের গোটা অর্থনীতি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বণিকসভা এমসিসিআই-এর কাউন্সিল অন স্টিল চেয়ারম্যান রবি আগরওয়ালের সাফ বক্তব্য, ‘গত কয়েক বছর ধরেই ইস্পাত শিল্প অত্যন্ত কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। করোনার জেরে লকডাউনে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। যদি সরকার কোনও রকম আর্থিক প্যাকেজ না দেয়, রাজ্যের বহু কারখানা রুগ্ণ ও বন্ধ হয়ে যাবে।’ টাটা মেটালিক্স, ইস্কো, দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের মতো বৃহৎ ইস্পাত কারখানা ছাড়া পশ্চিমবঙ্গে বড় ও মাঝারি মিলিয়ে ২৫০-টির মতো লৌহ ও ইস্পাত কারখানা রয়েছে। তারা মূলত স্পঞ্জ আয়রন, ফেরো অ্যালয়, পিগ আয়রন, ইস্পাতের বিলেট ও প্যালেট এবং টিএমটি বার উৎপাদন করে। বছরে তাদের সম্মিলিত বিক্রি ১ লক্ষ কোটি টাকা থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে ১০-১৫ শতাংশ রপ্তানি হয়। এ রাজ্য থেকে মূলত ফিনিশনড ও সেমি-ফিনিশড ইস্পাত পণ্য আফ্রিকা, ইউরোপ, চিন, নেপাল, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডে রপ্তানি হয়, যা এখন সম্পূর্ণ বন্ধ। শাকম্বরী ইস্পাত ও পাওয়ার-এর চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর দীপক আগরওয়াল বলেন, ‘আমাদের চারটি কারখানার মধ্যে পুরুলিয়ার দুটিতে ৫০ জন কর্মী নিয়ে উৎপাদন চালু করার সরকারি অনুমোদন পেয়েছি। কিন্তু, ৫০ জন তো আমার সিকিওরিটি-তেই লেগে যায়। উৎপাদন কী করে হবে? তাই মোট কর্মী সংখ্যার অন্তত ৫০ শতাংশ না নিয়ে উৎপাদন চালু করা যাবে না। এটা সরকারকে জানিয়েছি।’ তিনি জানান, করোনা ও লকডাউনের জন্য চলতি অর্থ বছরে রাজ্যের লৌহ ও ইস্পাত শিল্প গত বছরের তুলনায় অন্তত ২০,০০০ কোটি টাকার ব্যবসা হারাবে। গত এক মাসে কোমায় চলে গিয়েছে রিয়েল এস্টেট ক্ষেত্র। বিশেষজ্ঞদের মতে, নয়া প্রকল্প শুরুতেও আগামী অন্তত ছয় মাস এমনই ভাটা চলবে। ফলে, মাথায় হাত ইস্পাত উৎপাদনকারীদের। কারণ, বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় টিএমটি বার উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গ দেশের প্রথম পাঁচ রাজ্যের একটি। বছরে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা টিএমটি বার থেকেই আসে। রেশমি মেটালিক্স-এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এল বি চৌরাসিয়ার কথায়, ‘আমাদের টিএমটি বার উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ। শুধু পেলেট প্ল্যান্ট চলছে ২৫ শতাংশ কর্মী নিয়ে। লকডাউনের জন্য এখনও পর্যন্ত শুধু আমাদের ১,০০০ কোটি টাকার মতো ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে। মার্চ মাস পর্যন্ত কর্মীদের বেতন মিটিয়েছি। এপ্রিলের বেতন নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’ রাজ্যের ইস্পাত শিল্পের এই কঠিন পরিস্থিতির জন্য রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে। স্টিল রোলিং মিল অ্যাসোসিয়েশন-এর চেয়ারম্যান বিবেক আদুকিয়ার বক্তব্য, ‘অনেক সংস্থাই উৎপাদন না করা সত্ত্বেও শ্রমিকদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। সরকার যদি বাস্তব পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা না করে লকডাউন আরও বাড়ায়, সে ক্ষেত্রে অর্থাভাবে কর্মীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা বন্ধ করতে বাধ্য হবে সংস্থাগুলিকে। এর আর্থ-সামাজিক প্রভাব সুদূরপ্রসারী হবে।’ ইস্পাত শিল্প বিশেষজ্ঞ গোপাল কৃষ্ণ শরণের পর্যবেক্ষণ, ‘সরকার সহায়তা না দিলে কর্মীদের এপ্রিল মাসে বেতন অধিকাংশ সংস্থা দিতে পারবে না। এর সামাজিক প্রভাব যেমন মারাত্মক হবে, তেমনই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অবনতি হতে পারে।’ রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কী কী সহায়তা চায় রাজ্যের ইস্পাত শিল্প? কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবিগুলির তালিকার মধ্যে রয়েছে ঋণে সম্পূর্ণ সুদ মকুব, ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে অনাদায়ী ঘোষণা না করা, কর্মীদের বেতন খাতে সরকারি ভর্তুকি, কর্মীদের পিএফ ও ইএসআই খরচ সরকারের বহন করা এবং রপ্তানিতে উৎসাহব্যঞ্জক প্রকল্প ঘোষণা করা। রাজ্যের লৌহ ও ইস্পাত কারখানাগুলির মোট খরচের ২০ শতাংশ যায় বিদ্যুৎ বিল দিতে। কারখানা বন্ধ অবস্থায় বিদ্যুৎ খরচ না করলেও সংযোগ নেওয়ার জন্য স্থায়ী ভাবে নিয়মিত তাদের একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিল মেটাতে হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই বিদ্যুৎ বিলে ছাড় দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছে কারখানা মালিকরা। রবি আগরওয়ালের মন্তব্য, ‘পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, গোয়া ও তেলেঙ্গানা সরকার কারখানা বন্ধ থাকার জন্য বিদ্যুৎ বিলে সম্পূর্ণ ছাড় দিয়েছে। আমরা পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে এ ব্যাপারে আর্জি জানিয়েছি।’ যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ বিলে ছাড় একমাত্র কেন্দ্র দিতে পারে। রাজ্য সরকারের কিছু করার নেই।


from Business News in Bengali, Latest Bangla Business News, Financial News - Eisamay https://ift.tt/2KEn19E

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন